শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভারতীয় চোরাই চিনির চালান জব্ধ করেছে পুলিশ। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চিনির এ চালান দেশের মাঠিতে নিয়ে এসেছে চোরাকারবারী একটি সিন্ডিকেট। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট রয়েছেন সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও পোষাকী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা, এমন তথ্য ওপেন সিক্রেট। তবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো চোরাকারবারিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আজ শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া সেল জানায়- বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জালালাবাদ থানাধীন শিবেরবাজার এলাকার উমাইরগাঁও-এর রাস্তায় ভাদেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ভারতীয় চোরাই চিনি ভর্তি ১৪টি ট্রাক জব্দ করে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। এসময় একটি মোটরসাইল ( সিলেট মেট্রো-ল-১২-২৭৪৯) ও একটি প্রাইভেট কার (সিলেট-গ-১১-০৮৯৫) ফেলে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন এসএমপি’র উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহর আলী শেখ (পিপিএম)। এ চালান সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকাস্থ ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে সেগুলো ১৪টি ট্রাকে ভওে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় চোরাকারবারিরা। জব্দকৃত ১৪টি ট্রাকে ২ হাজার ১১৪ বস্তা ভারতীয় চিনি ছিলো। প্রতি বস্তায় ছিলো ৫০ কেজি করে। এ হিসাবে ১ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কেজি ভারতীয় চিনি ছিলো ১৪টি ট্রাকে। যার বাজার দর ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ১২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে পরবর্তীতে জালালাবাদ থানার এসআই মো. সালাহ্ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা (নং-৫/৮৪) দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চোরাকারবারিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তাদের শনাক্ত ও আটক করতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়েছেন এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে চোরাইপথে চিনি আসে সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, ফেনী, তিন পার্বত্য জেলা (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি) এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাটসহ ২৭টি এলাকা দিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি চিনি আসে সিলেট অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে। সীমান্তের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ্ও জকিগঞ্জ এখন চিনি চোরাইচালানের নিরাপদ রুট। এ পথে চিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে, সিলেট নগরী পৌছার পর মাঝে মধ্যে অভিযানে কিছু চালান ধরা পড়ে। নতুবা অধিকাংশ চালানই পৌছে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বৃহস্পতিবারের চালান ধরা নিয়ে নানা প্রশ্নের অবতারনা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন হয়তো চেইনে ( বাগবাটোয়ারার সিন্ডিকেটে) সমস্যা হয়েছে, সেকারনে জব্ধ হয়েছে এ চালান। সম্প্রতি চিনি চোরাচালানের মাধ্যমে কোটি পতি হয়েছেন অনেকে।
জানা গেছে, ভারতের চিনি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় দীর্ঘদিন ধরে চড়া দেশের বাজার। দফায় দফায় দাম বেড়ে গত রমজানে খুচরা বাজারে দেড়শ টাকা ছাড়ায় চিনির কেজি। বাজারের এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কম দামে অবৈধ পথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চিনি দেশে আনছে বেশ কয়েকটি অসাধু চক্র। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে ভোক্তাকে চিনি কিনতে হচ্ছে আগের চড়া দামেই। এছাড়া ভারতীয় নিম্নমানের চিনির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ভোক্তারা।
গংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী- বর্তমানে দেশের বিক্রিত চিনির প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি আসছে অবৈধ পথে। ফলে বর্তমানে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চল দিয়ে এসব চিনি প্রবেশ করছে। আমদানিকারকদের দাবি- যে হারে চোরাই চিনি দেশে ঢুকছে তাতে আগামীতে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাতে পারে সরকার। এদিকে ভারতীয় চোরাই চিনির প্রতি কেজির মূল্য পড়ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা রুপি। যেখানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির পাইকারি মূল্য ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা দরে। কম দামে এসব নিম্নমানের চিনি বেশি দামে বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্ররা। যদিও সীমান্তে চোরাই চিনি চালান জব্দে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনির কারণে সরকার প্রতি কেজি চিনিতে রাজস্ব হারাচ্ছে ৩৮ টাকা। অথচ চোরাইপথে আসা চিনি অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ভেজালে ভরপুর। সেটা দেশীয় চিনির চেয়ে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা কম থাকলেও খুচরায় তেমন প্রভাব নেই। অর্থাৎ ভোক্তারা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। তবে অত্যধিক লাভের কারণে অনেকেই অবৈধ চিনির ব্যবসায় জড়িয়েছেন। অন্যদিকে, চিনি চোরাই পথে আনলেও তা বোঝার উপায় নেই। কারণ ভারত থেকে আনা চিনি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বস্তার নাম-লগো ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন কোনটা চোরাই তা বুঝার উপায় থাকে না।
সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব